Give & Take

সবকিছু গিভ অ্যান্ড টেকের হিসেবে চলে না। জীবন বড় জটিল বস্তু। প্রেম-ভালোবাসা, মায়া-মমতা, এসবের ক্ষেত্রে কোন গিভ অ্যান্ড টেক নেই।
হতে পারে কিছু ক্ষেত্রে কথাটা সত্যি। কিন্তু এমনও হতে পারে, কোন না কোনভাবে প্রায় সবকিছুই গিভ অ্যান্ড টেক।
আপনি কাউকে বড় ভালোবাসেন। তার জন্য দিতে পারেন আপনার সবকিছু (অন্তত মিথ্যে এ দাবিটি হরহামেশাই করে থাকেন!)। কিন্তু কল্পনা করুন, আপনি যদি দিনের পর দিন দিতেই থাকেন, ভালোবাসতেই থাকেন, খরচ করতে থাকেন আপনার সময়, অর্থ, শক্তি (মাঝখানেরটা বেশী গুরুত্বপূর্ণ!), কিন্তু দ্বিতীয় মানুষটি আপনাকে কিছুই ফিরিয়ে না দেয় – আপনার জন্য রাখে শুধু নির্বিকার নীরবতা, কিংবা অবহেলা করে চলে, তাহলে আপনার মায়া-মমতা ক’দিন টিকবে বলে মনে করেন? নিশ্চিতভাবেই বেশীদিন নয়, যদি না এটা বাংলা সিনেমার স্ক্রিপ্ট হয়। কাজেই, গিভ অ্যান্ড টেক!
সবকিছু গিভ অ্যান্ড টেক, এটা প্রতিষ্ঠা করা এ লেখার উদ্দেশ্য নয়। মূল উদ্দেশ্য হল, গিভ অ্যান্ড টেক নিয়ে মানুষের মধ্যে যে ধারণা আছে সেটার ভুলটা ধরিয়ে দেয়া।
আমরা কিন্তু অবচেতনভাবে ঠিকই মনে করি, অর্থাৎ জানি যে, সবকিছুই দেয়া-নেয়া, একরকম বিনিময় প্রথা। আপনি কিছু দিলে, তবেই কিছু পাবেন। কিন্তু ঠিক স্বীকার করতে মন চায় না। কেন?
কারণ, তাহলে কেন যেন নিজেকে ইনফিরিয়র মনে হয়, নিচু শ্রেণীর জীব বলে মনে হয়। নিয়মটা কেমন যেন, বড় সহজ, আমাদের মত বুদ্ধিমান প্রাণীদের সাথে ঠিক খাপ খায় না! সবকিছু দেয়া-নেয়ার মধ্যে পড়ে, এমনটা ভাবলে লোকে কী বলবে?
তাই আমরা অস্বীকার করি। বিনিময় প্রথাকে অস্বীকার করি। দাবী করি, আমরা উচ্চতর মানবিক গুণাবলীর অধিকারী, আমরা সবকিছু দেয়া ও নেয়ার মানদণ্ডে বিচার করি না। আমরা বলতে চাই, আমরা কোন বিনিময়ের আশা না করেই ভালোবাসতে পারি, কিছু করতে পারি। কিন্তু যে আমাদের কোনোদিন উপকার করে নি, আমরা তার উপকার করার সময় চিন্তা করি। কেন করবো? আসলেই করবো কি? না করলে ক্ষতি কী?
কিন্তু এভাবে ভেবে দেখেছেন কি, গিভ অ্যান্ড টেক বলেই না আপনার মধ্যে রেসপন্সিবিলিটি তৈরি হয়। আপনি একটি সম্পর্ক নিয়ে সতর্ক হয়ে থাকেন। আপনি ভাবেন, আপনার সঙ্গী বা সঙ্গিনীর যত্ন না করলে সে আপনার যত্ন করবে না। এভাবে আপনাদের সম্পর্ক মজবুত হয়।
সত্যি বলতে, গিভ অ্যান্ড টেককে জীবনের প্রায় সব স্তরে স্বীকার করে নিলে কিন্তু কোন ক্ষতি হয়ে যাবে না। কেউ আপনার ভালো করলে তবেই আপনি প্রশংসা করেন। কেউ ক্ষতি করলে তবেই গাল দেন। তাহলে স্বীকার করতে সমস্যা কোথায়? হতে পারে গিভ অ্যান্ড টেককে স্বীকার করে নিলে আপনার জীবনের উন্নতিই হবে। পৃথিবীতে এমন কোন ছাত্র আছে কি, যে পড়াশোনা না করে (গিভ) ভালো রেজাল্ট করেছে (টেক)?
গিভ অ্যান্ড টেকের ঊর্ধ্বে আছেন শুধু সৃষ্টিকর্তা। আমরা তাঁকে ডাকি আর না ডাকি, তাঁর কিছু এসে যায় না। আমরা যা করি, নিজের স্বার্থে। আর তাতে দোষের কিছু নেই কিন্তু! আপনি যদি নিজের স্বার্থেই ভালো কিছু করেন, অপরাধ কী?
Did you pay for it? Good, now you’re gonna get it.
writer:-Ishak khan

No comments

Featured post

একনায়িকাতন্ত্র

আমার বুকের ভেতরের "মন" নামক রাষ্ট্রে ভালোবাসার অজুহাতে যে স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা চলছে, তার নাম একনায়িকাতন্ত্র। নায়িকার ইচ্ছেমতো...

Powered by Blogger.