আল-কুরআন ও আধুনিক বিজ্ঞান..
আল-কুরআন ও আধুনিক বিজ্ঞান... কু’রআনে কী ধরনের বৈজ্ঞানিক তথ্য আছে?
কুরআন হচ্ছে শেষ ওহী এবং একটি প্রমাণ, যা শুধু চৌদ্দশত বৎসর আগের আরবদের জন্য নয়, আজকের বিজ্ঞানীদের জন্যও। যারা বিংশ শতাব্দীতে বাস করছে-যা খুব শীগগিরই একবিংশ শতাব্দী হয়ে যাবে, তাদের জন্য কুরআনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হয়তোবা এটা যে, আধুনিক বিজ্ঞানের অধিকাংশ আবিষ্কার ও কুরআন পরস্পর সঙ্গতিপূর্ণ, এবং কোন কোন ক্ষেত্রে আগের ধারণাকৃত বহু বিষয় গত বিশ বৎসরে আবিষ্কৃত হয়েছে।
কু’রআনে পৃথিবী, সৌরজগত, মহাবিশ্ব এবং সৃষ্টির সূচনার যে বর্ণনা দেওয়া আছে, তার সম্পর্কে ১৪০০ বছর আগে মানুষের কোনোই ধারণা ছিল না। কু’রআন এমন একটি সময়ে প্রকাশ করা হয়েছে, যখন কোনো পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন বিজ্ঞান, মহাকাশ বিজ্ঞান, চিকিৎসা বিজ্ঞান— এসব কিছুই ছিল না। অথচ কু’রআন, যা কি না ৬১০-৬৩২ খ্রিস্টাব্দে নাজিল হয়েছে: এখন থেকে ১৪০০ বছর আগে এমন কিছু বৈজ্ঞানিক তথ্য প্রকাশ করেছে, যা শুধুমাত্র সাম্প্রতিক বিজ্ঞানই সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণ করতে পেরেছে।
সৃষ্টি তত্ত্ব
----------------------------------
• আল্লাহ সব কিছুর সৃষ্টি করেছেন শূন্য থেকে – ২:১১৭।
• পৃথিবী এবং মহাকাশ/বায়ুমণ্ডল একসময় একসাথে মিলিত ছিল এবং তা আলাদা করা হয়েছে বিশাল শক্তি দিয়ে – ২১:৩০।
• পানি থেকে সকল প্রাণ তৈরি হয়েছে – ২১:৩০।
• মহাবিশ্ব ক্রমাগত সম্প্রসারিত হচ্ছে – ৫১:৪৭।
• মহাবিশ্ব ছয়টি পর্যায়ে তৈরি হয়েছে এবং প্রাণ সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ তৈরি হয়েছে চারটি পর্যায়ে – ৫০:৩৮, ৪১:১০।
• প্রতিটি প্রাণীর সৃষ্টি হয় নিয়ন্ত্রিত বিবর্তনের মাধ্যমে – ৭:৬৯, ১৫:২৮, ২৪:৪৫, ৩২:৭, ৭১:১৪।
• মানুষের সৃষ্টির সুচনা হয়েছিল পানিসিক্ত অজৈব পদার্থ (কাঁদা) থেকে – ৩২:৭, ১৫:২৬।
• পৃথিবীর বাইরে মহাকাশে/বায়ুমন্ডলে প্রাণ আছে – ৪২:২৯। গত বছর বিজ্ঞানীরা আবিস্কার করেছেন মেঘে অত্যন্ত উচুতেও বিপুল পরিমাণে অতি ক্ষুদ্র কীটাণু আছে।
মহাকাশ বিজ্ঞান
----------------------------
• সূর্য পূর্ব দিকের দুটি প্রান্তে উঠে এবং পশ্চিম দিকের দুটি প্রান্তে অস্ত যায় – ৫৫:১৭, ৭০:৪০, ৩৭:৫। যেমন, গ্রীষ্ম কালে এক প্রান্তে, শীতকালে আরেক প্রান্তে।
• পৃথিবী নিজস্ব অক্ষে ঘুরছে – ২৭:৮৮, ২১:৩৩, ৩৬:৪০।
• সূর্যের নিজস্ব অক্ষ রয়েছে, এটি গ্যালাক্সিকে কেন্দ্র করে ঘুরে – ৩৬:৪০, ২১:৩৩।
• পৃথিবী সম্পূর্ণ গোল নয় বরং তা ডিমের মত উপরে নিচে চ্যাপ্টা – ৭৯:৩০, ৩৯:৫।
• প্রথমে মহাকাশে সবকিছু ছিল ধোঁয়া, তারপর অভিকর্ষের প্রভাবে তা একত্র হয়ে পৃথিবীর মত গ্রহের জন্ম দিয়েছে – ৪১:১১।
• পৃথিবীর সমস্ত পানি এসেছে মহাকাশ থেকে, পরিমিত ভাবে – ২৩:১৮। ধারণা করা হয় ধূমকেতু এবং উল্কার মাধ্যমে আদি পৃথিবীতে পানি এসেছে।
• চাঁদ এবং সূর্যের আকৃতি এবং দূরত্ব সুনিয়ন্ত্রিত – ৫৫:৫। সূর্য চাঁদ থেকে ৪০০ গুণ বড় এবং চাঁদ পৃথিবী থেকে যত দূরে, সূর্য তার ৪০০ গুণ বেশি দূরে।একারণেই পূর্ণ সূর্য গ্রহন হয়। সূর্য যদি এর থেকে কাছে বা চাঁদ যদি এর থেকে দূরে হতো, অথবা চাঁদ ছোট হতো বা সূর্য যদি আরও বড় হতো, তাহলে পূর্ণ সূর্যগ্রহণ কখনও হতো না।
• মহাকাশের সম্প্রসারণের গতি যদি আলোর গতি থেকে বেশি না হতো, তাহলে কখনও রাত হতো না, কারন রাতের আকাশের প্রতিটি বিন্দুতে কোনো না কোনো নক্ষত্র বা গ্যলাক্সি থেকে আলো পৃথিবীতে এসে পৌঁছাত এবং রাতের আকাশ থাকতো দিনের মত জ্বলজ্বলে – ৩:১৯০।
পদার্থ বিজ্ঞান
----------------------------
• সময় আপেক্ষিক – ৩২:৫, ৭০:৪, ২২:৪৭।
• প্রতিটি বস্তু তৈরি হয়েছে জোড়ায় (ম্যাটার এবং এন্টিম্যাটার) – ৫১:৪৯।
• পৃথিবীতে যত লোহা আছে, তার সব এসেছে পৃথিবীর বাইরে থেকে – ৫৭:২৫। একমাত্র সুপারনোভার বিস্ফোরণে মহাবিশ্বে লোহা সৃষ্টি হয়, যা উল্কার মাধ্যমে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়।
• নক্ষত্র যেখানে ধ্বংস হয় – ব্ল্যাকহোল – ৫৬:৭৫।
• পালসার – যা অতি তীব্র ছিদ্রকারি গামারশ্মি বিচ্ছুরণ করে এবং সেকেন্ডে বহুবার ‘নক’ করে – ৮৬:১-৩।
• ২০০৬ সালের পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী আবিস্কার – মহাবিশ্বের সবকিছু সব জায়গায় সমান ভাবে ছড়িয়ে নেই বরং নির্দিষ্ট কিছু পথে মাকড়সার জালের বুননের মত ছড়িয়ে আছে – ৫১:৭।
• আগুন জ্বালাবার জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন তৈরি করে গাছের সবুজ পাতা – ৩৬:৮০।
• বৃষ্টির পানির ফোঁটা মাটিতে পড়ে মাটির কণাগুলো আয়নিত করে ফেলে, যার কারনে কণাগুলো “ব্রাউনিয়ান গতি” কারণে স্পন্দন করা শুরু করে। তারপর আয়নিত কণাগুলোর ফাঁকে পানি এবং অন্যান্য জৈব পদার্থ আকৃষ্ট হয়ে জমা হয় এবং মাটির কণাগুলো ফুলে যায় – ২২:৫।
• মেঘের পানিতে মৃত জমিকে জীবিত করার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ রয়েছে – ৫০:৯, ২৫:৪৮-৪৯। সমুদ্রের পানির উপরে ০.১ মিলিমিটার মোটা স্তর থাকে, যাতে বিপুল পরিমাণে জৈব বর্জ্য পদার্থ থাকে, যা মৃত শৈবাল এবং প্ল্যাঙ্কটন থেকে তৈরি হয়। এই বর্জ্য পদার্থগুলো ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, কপার, জিঙ্ক, কোবাল্ট, লেড শোষণ করে। এই স্তরটি পানি বাষ্প হবার সময় পানির পৃষ্ঠটানের কারনে পানির কণার সাথে চড়ে মেঘে চলে যায় এবং বৃষ্টির সাথে বিপুল পরিমাণে পড়ে, মাটির পুষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক পদার্থগুলো অনেকখানি সরবরাহ দেয়।
আবহাওয়া বিজ্ঞান
----------------------------
• বাতাসের মাধ্যমে মেঘ ছড়ায় এবং মেঘের মাঝামাঝি স্তরে স্তরে মেঘ জমা হয়ে বৃষ্টির মেঘ তৈরি হয় – ২৪:৪৩, ৩০:৪৮।
• মেঘ অত্যন্ত ভারী, একটি বৃষ্টির মেঘ ৩০০,০০০ টন পর্যন্ত ওজন হয় – ১৩:১২, ৭:৫৭।
• আকাশে অনেক উচ্চতায় উঠার সময় অক্সিজেনের অভাবে শ্বাস কষ্ট হয় এবং বুক সঙ্কীর্ণ হয়ে যায় – ৬:১২৫।
• আকাশ পৃথিবীর জন্য একটি বর্ম সরূপ যা পৃথিবীকে মহাকাশের ক্ষতিকর মহাজাগতিক রশ্মি এবং হাজারো উল্কা থেকে রক্ষা করে – ২১:৩২, ২:২২।
• আকাশ প্রতিফলন করে – পানি বাস্প হয়ে মহাকাশে হারিয়ে যাওয়া থেকে এবং পৃথিবীকে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে – ৮৬:১১।
• সমুদ্রের নিচে আলাদা ঢেউ রয়েছে, যা উপরের ঢেউ থেকে ভিন্ন – ২৪:৪০।
• বৃষ্টির পরিমান সুনিয়ন্ত্রিত – ৪৩:১১। পৃথিবীতে প্রতি বছর যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়, তার পরিমাণ ৫১৩ ট্রিলিয়ন টন এবং ঠিক সমপরিমান পানি প্রতি বছর বাস্প হয়ে মেঘ হয়ে যায়। এভাবে পৃথিবী এবং আকাশে পানির ভারসাম্য রক্ষা হয়।
• ভূমধ্যসাগর এবং আটলান্টিক সাগরের মধ্যে লবনাক্ততার পার্থক্য আছে এবং তাদের মধ্যে একটি লবণাক্ততার বাঁধ রয়েছে, যার কারনে আটলান্টিক সাগরের লবণাক্ত পানি, ভূমধ্যসাগরের কম লবণাক্ত পানির সাথে মিশে যায় না এবং দুটি সাগরে দুই ধরনের উদ্ভিদ এবং প্রাণীর বসবাস সম্ভব হয় – ৫৫:১৯-২০।
জীব বিজ্ঞান
----------------------------
• বাতাস শস্যকে পরাগিত করে – ১৫:২২।
• মৌমাছির একাধিক পাকস্থলী আছে। কর্মী মৌমাছিরা স্ত্রী মৌমাছি, তারা পুরুষ নয়। মধুর অনেক ঔষধি গুণ আছে – ১৬:৬৮-৬৯।
• গবাদি পশুর খাবার হজম হবার পর তা রক্তের মাধ্যমে একটি বিশেষ গ্রন্থিতে গিয়ে দুধ তৈরি করে, যা আমরা খেতে পারি – ১৬:৬৬।
• স্ত্রী পিপড়া তার পেটের কাছে অবস্থিত একটি অঙ্গ দিয়ে শব্দ করে অন্য পিপড়াদের সাথে কথা বলতে পারে এবং নির্দেশ দেয়, যা সাম্প্রতিক কালে মানুষের পক্ষে যন্ত্র ব্যবহার করে ধরা গেছে – ২৭:১৮।
• উদ্ভিদের পুরুষ এবং স্ত্রী লিঙ্গ আছে – ১৩:৩।
• গম শীষের ভেতরে রেখে দিলে তা সাধারণ তাপমাত্রায়ও কয়েক বছর পর্যন্ত ভালো থাকে এবং তা সংরক্ষণ করার জন্য কোনো বিশেষ ব্যবস্থার দরকার হয় না – ১২:৪৭।
• উঁচু ভুমিতে ফুল ও ফলের বাগান ভালো ফসল দেয়, কারণ উচু জমিতে পানি জমে থাকতে পারে না এবং পানির খোঁজে গাছের মূল অনেক গভীর পর্যন্ত যায়, যার কারণে মূল বেশি করে মাটি থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সংগ্রহ করতে পারে। তবে শস্য, যেমন আলু, গম ইত্যাদি ফসলের জন্য উল্টোটা ভালো, কারণ তাদের জন্য ছোট মূল দরকার, যা মাটির উপরের স্তর থেকে পুষ্টি নেয় – ২:২৬৫।
• গাছে সবুজ ক্লোরোফিল রয়েছে – ৬:৯৯।
• রাত হচ্ছে বিশ্রামের জন্য, আর দিন হচ্ছে কাজের জন্য, কারণ দিনের বেলা সূর্যের আলো আমাদের রক্ত চলাচল, রক্তে সুগার, কোষে অক্সিজেনের পরিমাণ, পেশিতে শক্তি, মানসিক ভারসাম্য, মেটাবোলিজম বৃদ্ধি করে– ২৮:৭৩।
চিকিৎসা বিজ্ঞান
----------------------------
• মানব শিশুর লিঙ্গ নির্ধারণ হয় পুরুষের বীর্য থেকে – ৫৩:৪৫-৪৬, ৭৫:৩৭।
• মায়ের গর্ভ শিশুর জন্য একটি সুরক্ষিত জায়গা। এটি বাইরের আলো এবং শব্দ, আঘাত, ঝাঁকি থেকে রক্ষা করে, শিশুর জন্য সঠিক তাপমাত্রা তৈরি করে, পানি, অক্সিজেনের সরবরাহ দেয় – ২০:২৩, ১২:১৪।
• মায়ের গর্ভে সন্তান কিভাবে ধাপে ধাপে বড় হয়, তার নিখুঁত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, যা কু’রআনের আগে অন্য কোনো চিকিৎসা শাস্ত্রের বইয়ে ছিলনা – ২৩:১৩-১৪। যেমন: প্রথমে শিশু একটি চাবানো মাংসের টুকরার মত থাকে, যা জরায়ুর গায়ে ঝুলে থাকে, তারপর প্রথমে হাড় তৈরি হয় এবং তারপর হাড়ের উপর মাসল তৈরি হয়, তারপর তা একটি মানব শিশুর বৈশিষ্ট্য পাওয়া শুরু করে।
• মানব শিশুর প্রথমে শুনতে পায়, তারপর দেখতে পায় – ৭৬:২। প্রথমে কান হয়, তারপর চোখ।
• মানুষের দেহ মৃত্যুর বহু বছর পর পাথরের মত শক্ত ফসিল হয়ে যায় এবং লোহা (পাইরাইট) তৈরি হয় – ১৭:৪৯-৫১। [সুত্র]
• মানুষের আঙ্গুলের ছাপ প্রত্যেকের জন্য ভিন্ন, পৃথিবীতে দুটি মানুষ পাওয়া যাবে না, যাদের আঙ্গুলের ছাপ হুবহু মিলে যাবে – ৭৫:৪।
• মানুষকে প্রথম ভাষা ব্যবহার করা শেখানো হয়েছে এবং ভাষার জন্য অত্যাবশ্যকীয় স্বরনালী একমাত্র মানুষকেই দেওয়া হয়েছে – ৫৫:৩-৪।
ভূতত্ত্ব/ইতিহাস
----------------------------
• ইরাম নামে একটি শহরের কথা বলা আছে, যেখানে অনেকগুলো পাথরের লম্বা স্তম্ভ আছে, যা কিনা ১৯৯২ সালে চ্যালেঞ্জার মহাকাশ যানের রাডার ব্যবহার করে মাটির নিচ থেকে প্রথম আবিষ্কৃত হয়েছে – ৮৯:৭। এর আগে মানুষ এই শহরের কথা জানত না, অথচ কু’রআনে এর কথা বলা ছিল।
• মানব সভ্যতার উন্নতি ধারাবাহিক ভাবে হয়নি, বরং আগে কিছু জাতি এসেছিল যারা আমাদের থেকেও শক্তিশালী ছিল, যারা ধ্বংস হয়ে গেছে – ৪০:৮২, ৩০:৯, ২০:১২৮।
• কু’রআনে ফেরাউনের সময় মিশরে যে সমস্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুর্ভিক্ষ, মহামারীর কথা বলা আছে, তা কু’রআন প্রকাশিত হবার হাজার বছর পরে আবিষ্কৃত একটি প্রাচীন হায়ারো গ্লিফিক লিপি ‘ইপুয়ার’-এ হুবহু একই ঘটনাগুলোর বর্ণনা পাওয়া গেছে, যা এর আগে কখনও জানা ছিল না – ৭:১৩০, ৭:১৩৩, ২৬:৫৭-৫৯।
বিঃদ্রঃ প্রচলিত বাংলা অনুবাদগুলোতে এমন সব বাংলা শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যা পড়লে আপনার কাছে কোনোভাবেই মনে হবে না যে, আয়াতগুলোতে কোনো বৈজ্ঞানিক তথ্য আছে। যেমন: মৌমাছি এবং পিপড়ার বেলায় যে আল্লাহ স্ত্রী লিঙ্গ ব্যবহার করেছেন, তা বেশিরভাগ অনুবাদকই লক্ষ্য করেননি। আবার যেমন আল্লাহ “সবকিছু” (“সবাইকে” নয়) জোড়ায় তৈরি করেছেন, জীব নয়, জড় পদার্থকে (ম্যাটার – এন্টি ম্যাটার), সেটা তারা লক্ষ্য করেননি। মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে “কাঁদা” থেকে যেখানে কাঁদা হচ্ছে পানিসিক্ত মাটি এবং আদি মাটি ছিল অজৈব পদার্থের মিশ্রণ, সুতরাং কাঁদা মানে হচ্ছে ‘পানিসিক্ত অজৈব পদার্থ।’
বাংলা অনুবাদকেরা এই খুঁটিনাটি ব্যাপারগুলো লক্ষ্য করেননি যে, বিশেষ কিছু আরবি শব্দের যে অর্থগুলো তাদের কাছে অপ্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে সেগুলোই সঠিক, তা তাদের সীমিত বৈজ্ঞানিক জ্ঞান অনুসারে যতই অবাস্তব মনে হোক না কেন। তাই পাঠকদেরকে অনুরোধ করবো: সাম্প্রতিক ইংরেজি অনুবাদগুলো পড়তে, বিশেষ করে অক্সফোর্ড থেকে প্রকাশিত প্রফেসর আব্দেল হালিমের অনুবাদ, যেখানে উপরোক্ত আয়াতগুলোর সঠিক অনুবাদ করা হয়েছে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যপার হলো: কু’রআনের ভাষা কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রবন্ধের ভাষা নয়, কারণ এটি কোনো বৈজ্ঞানিক রিসার্চ পেপার নয়। মানুষ যেভাবে চোখে দেখে, কানে শুনে, ইন্দ্রিয় দিয়ে অনুভব করে, আল্লাহ কু’রআনে সেই পরিপ্রেক্ষিতে বৈজ্ঞানিক তথ্যগুলো প্রকাশ করেছেন। তাই যারা কু’রআনের বর্ণনাগুলোকে বৈজ্ঞানিক ভাষার মাপকাঠিতে যাচাই করতে যাবেন, তারা ভুল করবেন। আল্লাহ কু’রআনে এমন সব শব্দ ব্যবহার করেছেন, যেগুলো ১৪০০ বছর আগে বিজ্ঞান সম্পর্কে কোনোই ধারণা নেই এমন মানুষরাও বুঝতে পারবে এবং একই সাথে বিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানীরাও সেই শব্দগুলোকে ভুল বা অনুপযুক্ত বলে দাবি করতে পারবে না।
নিশ্চয়ই আকাশগুলো এবং পৃথিবীর সৃষ্টি, এবং দিন-রাতের আবর্তনে বুদ্ধিমানদের জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে। (৩:১৯০)
আসুন আমরা কু’রআনের ভাষায় বুদ্ধিমানদের একজন হওয়ার চেষ্টা করি।
সূত্রঃ quranerkotha*com
No comments