সহজেই চিনুন আসল ও জাল নোট
আসল নোটের অনেক মূল্য কিন্তু জাল নোট এক টুকরা কাগজ ছাড়া আর কিছুই নয়। কিন্তু এই আসলের ভিরেই আমাদের হাতেও চলে আসতে পারে জাল নোট। হাটবাজারে এমনকি শপিং মলে কেনাকাটার ভিড়ে জালনোট গছিয়ে দেওয়া হয়। এখনতো এটিএম বুথে এমন কি ব্যাংক এর ক্যাশ কাউন্টার খেকেও জাল নোট পাওয়া যাওয়ার খবর পত্রিকা বা টিভি সংবাদে প্রকাশ পাচ্ছে। একশ, পাঁচশ ও এক হাজার টাকা মূল্যমানের নোট বেশি জাল হয়। আসল ও নকল নোট চেনার সহজ উপায় জানা থাকলে প্রতারণা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। আসল নোটের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য জানা থাকলে নোট জালিয়াত চক্রের দ্বারা প্রতারিত হওয়ার ঝুঁকি কমে।
আসলনোটচেনারসহজউপায়: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিসংবলিত নতুন একশ টাকা, পাঁচশ টাকা ও এক হাজার টাকার নোট লেনদেনের সময় নোটের প্রধান চারটি নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য যেমন- রং পরিবর্তনশীল কালি, অসমতল ছাপা, নিরাপত্তা সুতা ও জলছাপ সতর্কতার সঙ্গে পরখ করলে সহজেই আসল নোট চেনা যাবে। জাল নোট শনাক্তকারী যন্ত্রের সাহায্যেও নোট পরীক্ষা করা যায়।
১) রংপরিবর্তনশীলকালি: একশ টাকা, পাঁচশ টাকা ও এক হাজার টাকা মূল্যমানের নোটের ওপরের ডানদিকে কোনায় ইংরেজিতে লেখা নোটের মূল্যমান রং পরিবর্তনশীল কালিতে মুদ্রিত আছে। একশ ও এক হাজার টাকা মূল্যমানের নোট আস্তে আস্তে নাড়াচাড়া করলে নোটের মূল্যমান লেখাটি সোনালি হতে ক্রমেই সবুজ রংয়ে পরিবর্তিত হয়। একইভাবে পাঁচশ টাকার নোটে ৫০০ মূল্যমান লেখাটি লালচে হতে পরিবর্তিত হয়ে সবুজ হয়। জাল নোটে ব্যবহৃত এ রং চকচক করলেও তা পরিবর্তিত হয় না।
২) অসমতলছাপা: একশ টাকা, পাঁচশ টাকা ও এক হাজার টাকার নোটের সামনের ও পিছনের পিঠের ডিজাইন, মধ্যভাগের লেখা, নোটের মূল্যমান এবং সাতটি সমান্তরাল সরল রেখা আড়াআড়িভাবে মুদ্রিত আছে। হাতের আঙ্গুল দিয়ে ঘষলে এসব ডিজাইন, লেখা ও রেখা অমসৃণ অর্থাৎ খসখসে অনুভূত হয়। তাছাড়া নোটের ডান দিকে একশ টাকার নোটে তিনটি, পাঁচশ টাকার নোটে চারটি এবং এক হাজার টাকার নোটে পাঁচটি ছোট বৃত্তাকার ছাপ আছে, যা হাতের আঙ্গুলের স্পর্শে অসমতল অর্থাৎ উঁচু-নিচু বলে মনে হয়। এসব বৈশিষ্ট্য জাল নোটে সংযোজন করা সম্ভব নয়।
লেখকঃ জুবায়ের খান ।
৩) নিরাপত্তাসুতা: একশ টাকা, পাঁচশ টাকা ও এক হাজার টাকার নোটে মূল্যমান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের লোগোসংবলিত নিরাপত্তা সুতা রয়েছে। নোটের মূল্যমান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের লোগো নিরাপত্তা সুতার চারটি স্থানে মুদ্রিত আছে। এ নিরাপত্তা সুতা অনেক মজবুত যা নোটের কাগজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। নখের আঁচড়ে বা দুমড়েমুচড়ে নিরাপত্তা সুতা কোনোক্রমেই উঠানো সম্ভব নয়। জাল নোটে নিরাপত্তা সুতা সহজেই নখের আঁচড়ে উঠে যায়।
৪) জলছাপ: একশ টাকা, পাঁচশ টাকা ও এক হাজার টাকার প্রত্যেক প্রকার নোটে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি, বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম এবং নোটের মূল্যমান জলছাপ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম এবং নোটের মূল্যমান বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির তুলনায় উজ্জ্বল দেখায়।
শাস্তি: নোট জাল করা ও জাল নোট ক্রয়-বিক্রয় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন। ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে এ অপরাধের জন্য শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
জাল নোট শনাক্ত হলে: কোনো গ্রাহক কর্তৃক জাল নোট উপস্থাপিত হলে ব্যাংক কর্মকর্তারা অনেক ক্ষেত্রে জাল নোট ছিদ্র করে গ্রাহককে ফেরত প্রদান করেন, যা বিধিসম্মত নয়। এ ব্যাপারে করণীয় বিষয়ে ট্রেজারি রুলসে সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে। জাল নোট শনাক্ত হলে জাল নোটসহ উপস্থাপনকারীকে আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের কাছে সোপর্দ করতে হবে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকটতম কার্যালয়কে অবহিত করতে হবে। ব্যাংক কর্মকর্তারা যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হন যে, উপস্থাপনকারী এটিকে সরল বিশ্বাসে উপস্থাপন করেছেন তাহলে জাল নোটটি বাজেয়াপ্ত করতে হবে। বাজেয়াপ্ত করার সময় নোটের ওপর ‘জাল’ সিলমোহর লাগাতে হবে। অথবা লাল কালিতে বড় অক্ষরে ‘জাল’ শব্দটি লিখতে হবে। জাল নোটের অপরপিঠে উপস্থাপনকারীর নাম, পিতার নাম, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা, পূর্ণ স্বাক্ষর ও তারিখ লিখতে হবে। কার কাছ থেকে তিনি নোটটি পেয়েছিলেন সে ব্যাপারে তার লিখিত বিবৃতি নিতে হবে। উপস্থাপনকারী নিরক্ষর হলে তার বাম হাতের বুড়ো আঙ্গুলের ছাপ নিতে হবে। অধিকতর তদন্ত করার জন্য জালনোট এবং জাল নোটের উপস্থাপনকারীর বিবৃতি আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করতে হবে। তদন্ত শেষে আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ জাল নোট ও তদন্ত প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকের কারেন্সি অফিসার বরাবর প্রেরণ করবেন। আসল নোটের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে (www.bb.org.bd) বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা আছে।
No comments