খুব গুরুত্বপূর্ণ ৩০টি টিপস
শাক সবজিতে ভিটামিন ও খনিজ লবণের পরিমান অন্যান্য উপাদানের তুলনায় বেশী। রান্না করার ফলে ভিটামিন সি নষ্ট হয় বলে যতদুর সম্ভব শাক সবজি কাঁচা (লেটুস পাতা, ধনিয়া পাতা ও পুদিনা পাতা ইত্যাদি) কিংবা সালাদ খাওয়া ভাল। ভিটামিন সি ঘাটতি পুরনের জন্য লেবু ভাতের সাথে খাওয়া অত্যন্ত উপকারী।
ভাতের চাল রান্নার পূর্বে অনেকবার / অনেকক্ষন ধরে ধোঁয়া ঠিক নয় অর্থাৎ বেশি সময় নিয়ে চাল ধোয়াও উচিত না।
অল্প পানিতে ভাত রান্না করা উচিত।
ভাতের মাড় ফেলে দেওয়া সঠিক নয়। ভাতের মাড়ে ভাতের সব পুষ্টি থাকে। তাই মাড় ফেলে দিলে মাড়ের সঙ্গে সঙ্গে পুষ্টিও চলে যায়। এজন্য মাড় হাঁড়িতেই শুকিয়ে ফেলুন।
শাকসবজি কাটার আগে অবশ্যই ধুয়ে নিতে হবে এবং এগুলো বড় টুকরো করে কাটতে হবে। কাটার পর ধুলে ভিটামিন নষ্ট হয়ে যায়। আবার কেটে রাখা শাকসবজি বেশিক্ষণ ফেলে রাখবেন না। যে সবজিগুলো খোসাসহ খাওয়া যায় সেগুলো কাটার সময় খোসা রেখে দিন।
শাকসবজি বাজার থেকে নিয়ে এসে ফেলে রাখবেন না। যেগুলো রান্না করবেন না সেগুলো দ্রুত সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিন।
শাক বাজার থেকে নিয়ে এসে ভালোমতো বেছে ও পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। তারপর পানি ঝরিয়ে সংরক্ষণ করুন। রান্নার সময় ঢাকনা দিয়ে পাত্র ঢেকে রাখবেন। শাকসবজি বেশি আঁচে অনেকক্ষণ রান্না করলে ভিটামিন ও খাদ্যগুণ কমে যায়। সেদ্ধ করা সবজি ও কাঁচা ফলমূল সবচেয়ে বেশি পুষ্টিকর। সম্ভব হলে এগুলো খাওয়ার চেষ্টা করুন।
রান্নায় কম তেল-মশলা ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। কারণ অতিরিক্ত তেল-মশলা খাবারকে সুস্বাদু করলেও স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। শাক রান্নার সময় খুব বেশি সময় নিয়ে ভাজবেন না। অল্প আঁচে রান্না করে একটু পানি থাকতেই নামিয়ে ফেলুন। পুষ্টিমান বজায় থাকবে।
মাছ ও মাংস রান্না করার সময় যেন অতিরিক্ত সেদ্ধ হয়ে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। আবার কম সেদ্ধ হওয়া মাছ-মাংস খাওয়াও উচিত নয়। রান্নার সময় খাবার বেশি নাড়াচাড়া করা উচিত নয়। খাবার সোডা, স্বাদ লবণ ইত্যাদি খাবারে ব্যবহার না করাই ভালো। এগুলো খাদ্যের পুষ্টি নষ্ট করে দেয়।
বেশিদিন ফ্রিজে খাবার রাখলে পুষ্টিমান নষ্ট হয়ে যায়। তাই বেশি পরিমাণ খাবার একবারে রান্না না করাই ভালো। কাঁচা শাকসবজি ফ্রিজে রাখার সময় পানি ঝরিয়ে রাখতে হবে। আলাদা করে সংরক্ষণ করতে পারলে আরও ভালো হয়। মাছ ফ্রিজে রাখার সময় না ধুয়ে কেবল মুছে রাখার চেষ্টা করুন, বেশিদিন টাটকা থাকবে। রেফ্রিজারেটর সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে।
সবজি একেবারে ছোট ছোট করে না কেটে কিছুটা বড় টুকরো করে কাটুন। এতে পুষ্টিমান ভাল থাকবে।
সবজি কাটার ক্ষেত্রে খোসাসহ কাটার চেষ্টা করুন। কেননা, খোসার নিচেই বেশিরভাগ পুষ্টিমান থাকে।
রান্না করার সময় ঢাকনা ব্যবহার করুন। এতে রান্না যেম তাড়াতাড়ি হবে তেমনি এর পুষ্টিগুণ বজায় থাকবে। কেননা অক্সিজেন খাদ্যের সংস্পর্শে আসার ফলে ভিটামিন বেশি নষ্ট হয়।
কোন খাদ্যই বেশি সময় নিয়ে রান্না করা উচিত নয়। বেশি সেদ্ধ হলে পুষ্টিমানও বেশি নষ্ট হয়। তাই শাকসবজি, মাছ, মাংস বা ডিম রান্না করার সময় কম পানিতে দ্রুত রান্না শেষ করুন।
শাক সবজি বাজার থেকে আনার পর পরই ভাল করে ধুয়ে ফেলতে হবে, বিশেষ করে সবুজ শাকপাতা। শাক সবজি ঠান্ডা পানিতে আস্তে আস্তে ধুয়ে ফেলতে হবে, যতক্ষন না সন্তোষ জনকভাবে তা পরিষ্কার হয়। এভাবে শাক সবজিকে ধুলাবালি ও রাসায়নিক বস্তু মুক্ত করা নিশ্চিত করতে হবে।
কোনো কোনো শাক সবজির স্থায়ীত্ব খুব কম । স্বল্প সময় সংরক্ষনের জন্য প্লাষ্টিকের মোড়কে অথবা বাক্সে রাখতে হবে যাতে ব্যবহারের পূর্বে এর পুষ্টি মান বজায় থাকে।
সময়ের সাথে সাথে শাক সবজির স্বাস্থ্যকর উপাদান নষ্ট হয়ে যায়। তাজা শাক সবজি বেছে নিয়ে পরিস্কার পানিতে ধুয়ে তারপর কাটতে হবে।টুকরা বড় বড় এবং সমান সাইজ করে কাটতে হবে।যতটা সম্ভব খোঁসা সহ কাটতে হবে। কাটার সাথে সাথে রান্না করতে হবে।
বাতাসে অক্সিজেন সবজির সংস্পর্শে বেশী আসে ফলে ভিটামিন নষ্ট হয়।ঢাকনা দিয়ে রান্না করা উচিৎ,
সিদ্ধ করার জন্য ক্ষার জাতীয় পদার্থ যেমন সোডা ব্যবহার করা উচিৎ নয় এতে ভিটামিন নষ্ট হয়। ধোয়া এবং অধিক তাপে অনেক পুষ্টি উপাদানও নষ্ট হয়।শাক সবজি সিদ্ধ করা পানি ফেলে দেয়া উচিৎ নয়।
অল্প পানিতে রান্না করা উচিৎ, এতে প্রয়োজনীয় ভিটামিন রক্ষা করা যায়।
কাঁটার পরে আলু বেশিক্ষণ পানিতে রাখা ঠিক নয়, আলু পরিস্কার পানিতে ধুয়ে তারপর কাটতে হবে। কাটার পরে ধোয়া ঠিক নয়।
যতটুকু সম্ভব পাতিলে ঢাকানা দিয়ে রান্না করা ভাল, এতে করে খাবারের পুষ্টিমান বজায় খাকে।
মাংস রান্নার সময় প্রথমেই লবণ দেবেন না। মাংস রান্নার মাঝামাঝি সময়ে লবণ দিয়ে ভালভাবে নাড়ুন। এরপর দেখে নিন পরিমান ঠিক হল কিনা।
তরকারির ঝোল ঘন করতে চাইলে কিছু কর্ণ ফ্লাওয়ার পানিতে গুলিয়ে নিয়ে ঢেলে দিন। লক্ষ্য রাখবেন কর্ণ ফ্লাওয়ারের দ্রবণটি যেন ভালমত তরকারির সাথে মিশে যায়।
ভাত রান্না করতে গিয়ে ভাতগুলো ঝরঝরে হচ্ছে না? কোন চিন্তা নেই চাল ধোয়ার পর ১০ মিনিট রেখে দিয়ে তারপর রান্না করুন অথবা রান্নার সময় ১ চা চামচ রান্নার তেল দিন। দেখবেন সুন্দর ঝরঝরে ভাত রান্না হয়েছে।
স্বাস্থ্য সম্মত মুরগীর তরকারি খেতে চাইলে চামড়া ছাড়িয়ে মুরগি রান্না করুন। কারন মুরগির চামড়াতেই থাকে প্রধান ফ্যাট।
সবুজ সবজি রান্না করতে চাইলে এক চিমটি চিনি দেন। দেখবেন সবজি কেমন সবুজ দেখাচ্ছে।
পরদিন রান্না করার জন্য মাংস সেদ্ধ এবং ঠান্ডা করে ফ্রিজে সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন।
রান্নার সময় গরম পানি ব্যবহার করুন।
ফ্রিজের মধ্যে আঁশটে গন্ধ এড়াতে ফ্রিজে এক টুকরো কাঠ কয়লা রেখে দিন। আঁশটে গন্ধ থাকবে না।
মাংস তাড়াতাড়ি সেদ্ধ করতে চাইলে খোসাসহ এক টুকরো কাঁচা পেঁপে দিন।
মাছ, মাংস বা ডিমের ঝোলে অনেক সময় লবণ বেশি হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে ওই তরকারিতে কয়েকটি সিদ্ধ আলু ভেঙে দিন। লবণ কমে যাবে।
মুরগির মাংস বা কলিজা রান্না করার সময় ১ টেবিল চামচ সিরকা দিন। এতে যেমন গন্ধ থাকবে না, তেমনি তাড়াতাড়ি সিদ্ধও হবে।
মাছ ভাজার সময় তেল ছিটলে একটু লবণ ছড়িয়ে দিন। তেল আর ছিটবে না।
বেরেস্তা করার সময় পেঁয়াজ ভেজে নামানোর আগে সামান্য পানি ছিটিয়ে দিন। তাড়াতাড়ি লালচে হবে।
কাঁচা মাছ বা মাংস ছুরি-চপিং বোর্ডে কাটতে চাইলে বেশ কিছুক্ষণ আগে থেকেই পানিতে ভিজিয়ে নরমাল করে নিন।
আলু ও ডিম একসঙ্গে সিদ্ধ করুন। দুটো দুই কাজে ব্যবহার করলেও সিদ্ধ তাড়াতাড়ি হবে।
অনেক সময়ই তাড়াতাড়ি স্যুপ রান্না করলে পাতলা হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে দুটি সিদ্ধ আলু ম্যাশ করে স্যুপে মিশিয়ে ফুটিয়ে নিন। স্যুপ ঘন হবে।
ডাল তাড়াতাড়ি রান্না করতে আগের রাতেই ভিজিয়ে রাখুন।
মসলাপাতি তাড়াতাড়ি খুঁজে পেতে কৌটার গায়ে নাম লিখে রাখুন।
👉 পরদিন কী রান্না করবেন তা আগের রাতেই ঠিকঠাক করে প্রস্তুতি নিন। তাহলে অল্প সময়ে রান্না হবে।
খাদ্য গ্রহনের মুল উদ্দেশ্য হল সুস্থ, সবল, কর্মক্ষম এবং নিরোগ দেহে জীবন যাপন করা। যে কোন খাবার খেয়ে পেট ভরানো যায় কিন্তু তাতে দেহের পুষ্টি চাহিদা মিটিয়ে সুস্থ থাকা যায় না। কাজেই খাদ্য ও পুষ্টি সম্বন্ধে আমাদের প্রত্যেকেরই পুর্ণ ধারণা থাকা দরকার। পুষ্টি জ্ঞানের অভাবের দরুন সুষম খাদ্য গ্রহণের প্রতিও আমরা খুব একটা সচেতন নই। ফলে যারা দুবেলা পেট পুরে খেতে পায় না তারাই যে শুধু পুষ্টিহীনতায় ভোগে তা নয়, সে সংগে যারা স্বচ্ছল তারাও অপুষ্টির শিকার হয়ে থাকে। অতএব, দেখা যাচ্ছে খাদ্য ও পুষ্টিজ্ঞআনের অভাব এদেশে ব্যাপক অপুষ্টির অন্যতম প্রধান কারণ।
এ দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ পুষ্টিহীন তার কারণে নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়ে শুধু ভগ্ন স্বাস্থ্যই নয় এমন কি মৃত্যুর দিকেও এগিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মা ও শিশুরাই প্রধানত অপুষ্টির সহজ শিকার। এ জন্যে খাদ্য ঘাটতিকে প্রধানত দায়ী করা হয়। তাই খাদ্য ঘাটতি পূরণের জন্যে শাক সবজি জাতীয় খাদ্যের প্রতি অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়।
খাদ্যের অভাব যে কেবল ভাত রুটি দিয়ে পুরণ করা সম্ভব নয় তা আমাদের তেমন বিবেচনায় নেই। সুতরাং, পুষ্টি উন্নয়নের জন্যে সব ধরনের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ করা জরুরী।
পুষ্টিবিদদের মতে দেহের চাহিদা পুরণের জন্য আমাদের দৈনিক গড়ে ১৮০-২৫০ গ্রাম শাক সবজি খাওয়া উচিত।
শাক সবজি দেহের রোগ প্রতিরোধক খাদ্য হিসাবে পরিচিত। খনিজ লবণ ও ভিটামিন দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং আরোগ্য লাভে সাহায্য করে। এসব উপাদানের প্রধান উৎস হল শাক ও সবজি। সুতরাং শরীরকে সুস্থ এবং রোগ মুক্ত রাখার জন্যে প্রচুর পরিমাণে শাক সবজি খাওয়া উচিত। অথচ আমরা বর্তমানে যে পরিমানে শাক সবজি খাই তা চাহিদার তুলনায় বড় জোর চার ভাগের এক ভাগ। যাহোক আমদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যথেষ্ট পরিমান শাক সবজি অবশ্যই থাকতে হবে।
শাক সবজির চাহিদা পুরনের জন্যে বসত বাড়ীর আঙ্গিনায় বাগান আকারে বা যেখানে যতটুকু পতিত জায়গা আছে সেখানে বেশী করে শাক সবজি চাষ করা আমাদের প্রত্যেকেরই একান্ত কর্তব্য। কারন প্রত্যেরকের পক্ষে রোজ রোজ বাজার থেকে শাক সবজি কিনে খাওয়া সম্ভব নয়। তাছাড়া বাজারে সব সময় টাটকা শাক সবজি পাওয়া যায় না। এজন্য প্রত্যেকটি পরিবারে যদি নিজস্ব শাক সবজি থাকে তাহলে এসব খাদ্যের জন্য আলাদা টাকা খরচ করার প্রয়োজন হয় না, উপরন্ত সব সময় টাটকা শাক সবজি খাওয়া ছাড়াও বাড়তি কিছু আয়ের সংস্থান করা যায়।
শাক সবজি শুধু খাদ্যই সরবরাহ করেনা উপরন্তু বৃক্ষ সম্পদ বৃদ্ধি করে পরিবেশের ভার সাম্য রক্ষা করে স্বাস্থ্যকর ও নির্মল পরিবেশ বজায় রাখে। নির্মল পরিবেশ গাছ পালার প্রভাব অপরিহার্য।
No comments