বিসিএস লিখিত প্রস্তুতি: বাংলা
বিসিএস লিখিত প্রস্তুতি: বাংলা
.
পছন্দের ক্যাডার পেতে হলে আপনাকে
একেবারে ১ম দিকে থাকতে হবে।
অন্যদের পেছনে ফেলতে হবে। সেজন্য
মূলমন্ত্র হলো – অন্যদের চেয়ে এগিয়ে
যাবার পথগুলো খুঁজে বের করা - প্রতিটা
সাবজেক্টে।
রিটেনের উত্তরপত্র দেখবেন ঐ বিষয়ের
কোন শিক্ষক। তো আমার স্ট্রাটেজি হল –
উত্তরে এমন কিছু থাকতে হবে যেন শিক্ষক
মনে করেন, এটা তাঁর সাবজেক্টের কোন
স্টুডেন্টের খাতা। মানে খাতা দেখে
বাংলার শিক্ষক ভাববেন -এতো বাংলার
স্টুডেন্ট, ইংরেজির শিক্ষক ভাববেন –এ যে
ইংরেজীর স্টুডেন্ট, আবার বিজ্ঞানের
শিক্ষকও ভাববেন –এ বিজ্ঞানের স্টুডেন্ট
না হয়ে যায় না। এই ধারনা যেই বিষয়ের
শিক্ষককে দিতে পারবেন, অবশ্যই আপনি
সেই বিষয়ে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে
যাবেন। তো ভাবছেন যে, এতো ভয়ানক
কঠিন কাজ!! সব সাবজেক্টে এটা করতে
হলে তো এরিস্টোটল হওয়া লাগবে! না
লাগবে না। আপনি মিস্টার সুমন বা মিজ
সুমনা হয়েই প্রতিটি সাবজেক্টে এটা
করতে পারবেন। চলুন দেখি কিভাবে –
.
আজ শুধু বাংলার কথা বলবঃ
(১) চোখ বন্ধ করে একটু ভাবুন - আপনি
বাংলার শিক্ষক, আপনি পরীক্ষার খাতা
দেখছেন; এখন খাতায় কি থাকলে আপনি
কনভিন্স হবেন যে এটা বাংলার
স্টুডেন্টের খাতা? এর উত্তর হলো -
সাহিত্যিক ভাষা, আনকমন ও সঠিক উদ্ধৃতি
(Quatation), বই/সাহিত্য পত্রিকার নাম,
চরিত্রের নাম ইত্যাদি। তাই এগুলো থাকতে
হবে আপনার বাংলা পরীক্ষার লেখায়।
আপনার লেখার ভাষা দেখেই বাংলার
শিক্ষক বুঝে ফেলবেন, আপনি বাংলার
স্টুডেন্ট কিনা। তাই অন্তত শুরু ও শেষে
অবশ্যই সুন্দর ভাষা (সাহিত্যিক ভাষা) ব্যবহার
করার কথা ভাবুন।আপনি সাহিত্যিক ভাষা
জানেন না? কোন সমস্যা নেই। পত্রিকার
সাহিত্য পাতা থেকে সাহিত্য সমালোচনা
মূলক ৪/৫ টা লেখা সংগ্রহ করুন।কয়েকবার
পড়ুন, কিছু প্রতীকয়াশ্রয়ী লাইনে দাগ
দিয়ে রাখুন।যে কোন টপিক নিয়ে লিখার
সময় ঐ রকম লাইন লিখতে চেষ্টা করুন,
কয়েকদিন চেষ্টা করলেই হয়ে যাবে।
.
(২) এবার সিলেবাস আর ৩৫তম বিসিএসের
প্রশ্ন অনুযায়ী বাংলার বিষয়গুলো দেখিঃ
.
ব্যাকরণঃ (৩০ নম্বর) ক) শব্দগঠন, খ) বানান/
বানানের নিয়ম, গ) বাক্যশুদ্ধি/ প্রয়োগ-
অপপ্রয়োগ, ঘ) প্রবাদ-প্রবচনের নিহিতার্থ
প্রকাশ, ঙ) বাক্যগঠন:
৩৫ তম বিসিএসের প্রশ্নে এই অংশের
লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে - কোন অপশন নেই।
সবগুলোই উত্তর করতে হবে। তাই ব্যাকরণে
গুরুত্ব দিতে হবে। সিলেবাসের সম্ভাব্য সব
কিছু দেখে ফেলতে হবে।
.
বইঃ এই অংশের জন্য আগের বছরের প্রশ্ন
(বাজারের যে কোন গাইড), নবম-দশম
শ্রেনীর বাংলা ব্যাকরণ বই , ইন্টার-
মিডিয়েটের যে কোন বাংলা ব্যাকরণ বই
(আপনি যেটা তখন পড়েছেন সেটাতেই
চলবে)। ব্যাকরণের কী পড়বেন?
.
ক) শব্দগঠনঃ নবম-দশম শ্রেনীর বাংলা
ব্যাকরণ বই থেকে (শব্দের অধ্যায়গুলো –
মানে উৎপত্তি অনুসারে, গঠন অনুসারে আর
অর্থ অনুসারে শব্দ, উপসর্গ, বচন, সমাস, প্রত্যয়,
সন্ধি) এগুলো দেখতে হবে।
খ) বানান/ বানানের নিয়মঃ বানানের জন্য
বাংলা একাডেমীর প্রমিত বাংলা
বানানের নিয়ম, আগের কয়েক বছরের
প্রশ্নের বানানশুদ্ধি দেখুন।
গ) বাক্যশুদ্ধি/ প্রয়োগ-অপপ্রয়োগঃ
বাক্যশুদ্ধি/ প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ আগে
রিটেনের সিলেবাসে ছিল। তাই আগের
বছরের প্রশ্ন থেকে দেখুন আর শুদ্ধ হবার
নিয়ম বুঝে শিখুন, তাতে অন্যরকম আসলেও
উত্তর করা যাবে।
ঘ) প্রবাদ-প্রবচনের নিহিতার্থ প্রকাশঃ
প্রবাদ-প্রবচনের নিহতার্থ সুন্দর সাহিত্যিক
ভাষায় ব্যাখ্যা করুন।
ঙ)বাক্যগঠনঃ নবম-দশম শ্রেনীর বাংলা
ব্যাকরণ বই থেকে (বাক্যের অধ্যায়গুলো –
আকাঙ্ক্ষা, আসত্তি, যোগ্যতা, বাক্য
পরিবর্তন, বাগধারা, বাক্যের
শ্রেণিবিভাগ) এগুলো দেখতে হবে।
.
ভাব-সম্প্রসারণ (২০ নম্বর):
--- ভাব সম্প্রসারণের বাক্যটি অপিরিচিত
হলে কয়েকবার পড়ুন, প্রতিটি শব্দে জোর
দিয়ে পড়ুন।
-- তারপর মূলভাবটা মাথায় আনুন।
-- সেটি কিভাবে সাজাবেন প্লান করুন।
-- এরপর সুন্দর সাহিত্যিক ভাষায় লিখুন।
-- এলোমেলো কথা না লিখে, প্রশ্নের
বিষয়টা নিয়ে ৫/৬ প্যারায় লিখে ফেলুন।
-- কোটেশান, উদাহরণ, ডেটা এসব দেয়া
যায়।
.
সারমর্ম(২০ নম্বর):
-- যেটির সারমর্ম করতে হবে সেটির তিন
ভাগের এক ভাগের চেয়ে বেশি কিছুতেই
নয়।
-- ৩/৪ টা বাক্যেই শেষ হবার কথা।
-- সময় নিয়ে করুন।
-- প্রশ্নের অংশটা কয়েকবার পড়ে আসল
বক্তব্য খুঁজে তাতে দাগ দিন।
-- সেই আসল বক্তব্যটি নিজের ভাষায়
লিখুন।
-- একটি বাক্যও যেন প্রশ্নের কোন বাক্যের
সাথে হুবহু মিলে না যায়।
-- কোন উদাহরণ দেয়া যাবে না।
.
সাহিত্যঃ এই ৩০ নম্বরে আপনি চেষ্টা
করলে অন্যদের চেয়ে ৫-১০ নম্বর বেশি
পেতে পারেন। সাহিত্যের প্রশ্নগুলো এক
কথায় উত্তর করবেন না। এখানে উদ্ধৃতি,
বইয়ের নাম, চরিত্রের নাম এসব দিয়ে
লিখতে চেষ্টা করুন। এজন্য সৌমিত্র
শেখরের ‘জিজ্ঞাসা’ বইটিতেই চলবে।
আগের প্রশ্ন দেখে প্রশ্নের ধারনা নিন।
এরপর সৌমিত্র শেখরের ‘জিজ্ঞাসা’
থেকে আগের প্রশ্ন যেসব বিষয় থেকে
এসেছে সেগুলো দাগ দিয়ে দিয়ে পড়ুন -
যেন ২য় বার পড়ার সময় শুধু দাগ দেয়া
অংশগুলো দেখলেই হয়। এটা একটু কষ্টকর,
কিন্তু যারা এই কষ্টটা করবেন, তাঁরা
বাংলাতে অন্যদের চেয়ে ভালো
করবেন। এখানে সাহিত্যের জন্য কিছু টপিক
দিয়ে দিচ্ছি (এই টপিকগুলো বাংলা
প্রোফেশনাল ক্যাডারদের জন্য
সিলেবাসে উল্লেখ করা আছে, তাই মনে
হয় এগুলো বেশি ইম্পরটেন্ট)
- চর্যাপদ, বড়ূচন্ডীদাস, শাহ্ মুহম্মদ সগীর,
শ্রীকৃষ্ণকীর্তণ, বৈষ্ণব পদাবলী, আরাকান
রাজসভা, সৈয়দ সুলতান, কৃত্তিবাস, দৌলত
উজির বাহরাম খান, মুকুন্দরাম চক্রবর্তী,
কাশীরাম দাস, আলাওল, আবদুল হাকিম,
ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর, শাহ্ মুহম্মদ গরীবুল্লা,
আরাকান রাজসভা কেন্দ্রিক বাংলা
সাহিত্য, ময়মনসিংহ গীতিকা, ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত,
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মধুসূদন দত্ত, বঙ্কিমচন্দ্র
চট্টোপাধ্যায়, মীর মশাররফ হোসেন,
কায়কোবাদ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রমথ
চৌধুরী, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, নজিবর
রহমান সাহিত্যরত্ন, জীবনানন্দ দাস, কাজী
নজরুল ইসলাম, ফররুখ আহমদ, জসীম উদ্দীন,
মাইকেল মধুসূদন দত্ত, বিহারীলাল চক্রবর্তী,
প্রমথ চৌধুরী, দীনবন্ধু মিত্র আর সেই
সাথে স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের
কয়েকজন কবি সাহিত্যিক ।
.
অনুবাদ (১৫ নম্বর): ভালো অনুবাদ করতে
পারলে এখানেও এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।
এটাতে সময় দিন। এজন্য আমি যেটা
করতামঃ
-- বাংলা ও ইংরেজি দুই অনুবাদের জন্যই
আমি প্রথমে রাফ করে সেটা ইচ্ছামত
কাটাকুটি করে ফাইনাল করতাম।
-- প্রথমে বড় বড় ইংরেজি বাক্যের বড় বড়
বাংলা বাক্য বানাইতাম।
-- তারপর এই বাংলা বড় বাক্যটিকে ভেঙে
যথাসাধ্য সাহিত্যিক ভাষায় ছোট ছোট
বাক্য ভেঙে ফেলতাম।
-- তাই বড় বড় ইংরেজি বাক্য দেখে ভয়
পাবার কিছু নেই।
-- একটা ইংরেজি বাক্যকে ভেঙে ২/৩ টা
বাংলা বাক্য করলেও সমস্যা নেই।
-- আর একটা বড় বাক্য রাখলেও চলে।
-- ভাষাটা ভালো হওয়া উচিত।
-- আগের প্রশ্ন নিজে নিজে প্রাকটিস করুন।
-- ইংরেজি পত্রিকা দেখতে পারেন।
.
গ্রন্থ সমালোচনাঃ (১৫ নম্বর) বিখ্যাত এবং
পরিচিত বইয়ের সমালোচনাই দেয়। অপশন
থাকবে বলে মনে হয় – ৩৫ তম তে ২টা
থেকে ১টা ছিল। এজন্য সৌমিত্র শেখরের
‘জিজ্ঞাসা’ বইটিতে প্রতিটি লেখকের
কয়েকটা বই নিয়ে আলচনা আছে। এগুলো
দাগ দিয়ে দিয়ে পড়া যেতে পারে।
সমালোচনার জন্যঃ
-- গ্রন্থের চরিত্র,
-- থিম / পটভূমি আব বিষয়বস্তু
-- এটি কি? - উপন্যাস/প্রবন্ধ/ছোটো গল্প
সেটি উল্লেখ করতে ভুলবেন না।
-- উপন্যাস হলে সামাজিক/ঐতিহাসিক/
কাব্যিক
-- বইটি সফল/বিফল,
-- নামকরণ যথার্থ কিনা
-- বইটি কি কালজয়ী? মানে এখনো মানুষ
পড়ে বা ভবিষ্যতেও পড়োবে কিনা – এসব
কথা দিয়ে লিখুন।
.
কাল্পনিক সংলাপ (১৫ নম্বর):
-- সংলাপের পাত্র-পাত্রী খেয়াল করতে
হবে।
-- বাংলা সংলাপে সম্বোধন গুরুত্বপূর্ণ। তাই
কার-কার সাথে সংলাপ সেটা খেয়াল করুন
ভালো করে, সেভাবে কয়েকটা সম্বোধন
ব্যবহার করুন।
-- সংলাপ অনেক টাইপের হতে পারে –
ব্যক্তিগত (বন্ধু/সহপাঠী),পারিবারিক (মা-
বাবা, ভাই-বোন), অফিশিয়াল (সিনিয়র/
জুনিয়র/কলিগ/সেবাপ্রার্থী/শিক্ষক),
সেমিনার/কনফারেন্স সংলাপ (সাম্প্রতিক
বিষয়), রাজনৈতিক (কোন সংগঠনের
নেতা) ইত্যাদি।
-- সংলাপের ভাষা প্রমিত বাংলাই হওয়া
উচিত। বর্তমানে টিভি নাটকের হিং-চিং
বাংলা নয়।
-- যে বিষয়ে সংলাপ, সেই "আসল কথাটা"
যেন মুখের ভাষায় শ্রোতার কাছে
বলছেন। মনে মনে ভাবুন, আসলেই আপনি এই
সংলাপটা করছেন - অার সেটাই লিখে
ফেলুন।
.
পত্র লিখন (১৫ নম্বর):
-- ফরমেট/নিয়ম-কানুন মেনে লিখুন।
-- সৌমিত্র শেখরের ‘বাংলা দর্পন’ ফলো
করতে পারেন।
-- ব্যক্তিগত পত্র বা মানপত্র লিখলে
সেটাতে মনের মাধুরী দিয়ে সাহত্যিক
চিঠি বানিয়ে ফেলুন।
-- দরখাস্ত/নিমন্ত্রণ/ব্যবসা-পত্র লিখলে
ফরমেট সঠিক যেন হয়।
-- খাম দিয়া উচিত।
.
রচনাঃ এতে ৪০ নম্বর, তাই ভালো আর
মোটামুটি লিখার মধ্যে ৫-১০ নম্বর vary
করতে পারে। তাই প্লান করে লিখুনঃ
--- প্রবন্ধ রচনার জন্য দুইটা বিষয়ঃ ভাষা এবং
ইনফরমেশান। তাই ভালো ভাষা আর বেশি
বেশি তথ্য।
--- শুরু আর শেষে যথাসাধ্য সুন্দর, সাহিত্যিক
ভাষা ব্যবহার করুন।
--- কি কি পয়েন্ট লিখবেন সেটার একটা
রাফ করতে পারেন।
--- যত বেশি সম্ভব লিখুন, সময়ে যা ধরে।
--- Definition দিতে পারেন। কোন বিখ্যাত
ডিকশনারির ডেফিনেশান, বা বিখ্যাত
পণ্ডিতের ডেফিনেশান। বানিয়ে দিবেন
না। মূলভাব ঠিক রেখে ইংরেজি থেকে
বাংলা করে দিতে পারেন কিন্তু পুরোপুরি
বানিয়ে দিলে ধরে ফেলবে।
--- কোটেশান, ডেটা, উদাহরণ, রিপোর্ট
এসব যথাসাধ্য বেশি ব্যবহার করুন। তবে
বানিয়ে কোটেশান দিবেন না। এগুলো
সহজেই ধরে ফেলা যায়। তাতে বুমেরাং
হবে।
.
বাংলার ২০০ নাম্বারের জন্য যে গাইডের
মত লিখবে আর যে নিজে সাহিত্যিক
ভাষায় লিখবে তাঁদের মধ্যে ৩০-৪০ নম্বর
পার্থক্য হওয়াও খুবই সম্ভব। তাই সাহিত্যিক
ভাষায় লিখার চেষ্টা করুন। নিজের মত
করে শুরুতেই প্রমাণ দিন – আপনি স্পেশাল।
.
//অগ্রজের অগ্রিম শুভকামনা
-- সুজন দেবনাথ (অব্যয় অনিন্দ্য)
সহকারি পররাষ্ট্র সচিব
No comments