মানুষ স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়
"একটা মানুষের ভেতর তুমি পরিমিতভাবে সবকিছু পাবা না ... যে মানুষটার ভেতর আবেগ বেশি, তার বাস্তবতার জ্ঞান অনেক কম ... যার চেহারা সুন্দর, হয়তো তার মন সুন্দর না ... কারো চোখ সুন্দর, কিন্তু দৃষ্টিভঙ্গিটা সুন্দর না ... কেউ আবার মেধাবী, কিন্তু স্মার্ট না ... কেউ হয়তো খুব ভদ্র কিন্তু অনেক বেশি পরিমাণে বোকা !!
যখন একটা মানুষের সাথে তুমি যে কোন সম্পর্কে জড়াতে চাও, তুমি ঐ মানুষটার ভেতরে সবকিছু একসাথে চাও ... তাকে চালাক হতে হবে, তাকে মাঝে মাঝে বোকাও হতে হবে ... তাকে একইসাথে পড়ুয়া ও ফাঁকিবাজ হতে হবে ... তার চেহারা সুন্দর হতে হবে, মন সুন্দর হতে হবে, সবকিছু সুন্দর হতে হবে ... তাকে একইসাথে নরম এবং কঠোর হতে হবে ... মোটকথা, তুমি যাকে চাও, তাকে একটা মহামানব হতে হবে !!
গল্প বা সিনেমার চরিত্রে এমন মহামানব পাওয়া যায় ... সে গাইতে পারে, নাচতে পারে, খালি হাতে মারপিট করে পৃথিবী জয় করতে পারে ... সে একই সাথে রোদের মত উষ্ণ, বৃষ্টির মত স্বচ্ছ, শীতের মত মলিন, বসন্তের মত কোমল হতে পারে ... এমনটা বাস্তবে পাওয়া যায় না ... তুমি খুঁজতে পারো ... গোটা পৃথিবী খুঁজতে পারো ... কিন্তু এমন পরিপূর্ণ মানুষ পাবে না !!
এই বাস্তবতাটা হয়তো তুমি বুঝো, কিন্তু তুমি মানতে পারো না !!
চারপাশে যখন কোন সম্পর্কের ভাঙ্গনের গল্প শুনি, তখন জিজ্ঞেস করলেই এই ব্যাপারটা ধরা পড়ে যায় ... সম্পর্কের শুরুর দিকে একটা মানুষের সবকিছুই ভালো লাগে ... সময় গড়ানোর পর তুমি ভাবতে থাকোঃ
"আরেহ, ওর মধ্যে তো এই গুণটা নেই ... আরেহ, ওর তো রাগ বেশি ... ওর তো রেজাল্ট খারাপ ... ওর তো এটা নেই ... সেটা নেই"
এই চিন্তাগুলো কেন আসে মাথায় ?? ... কারণ, তুমি হয়তো এমন কোন মানুষের সাথে মিশেছো, যার রাগ তোমার ভালোবাসার মানুষের চেয়ে কম ... যার চেহারা হয়তো অপেক্ষাকৃত সুন্দর ... হয়তো অন্য একটা মানুষের মেধা তোমার ভালোবাসার মানুষটার চেয়ে বেশি ... হয়তো অন্য মানুষটা একটু বেশি সেনসিবল !!
এই তুলনাগুলো যখন মাথায় ঢুকে যায়, আস্তে আস্তে তোমার মন উঠে যেতে থাকে ... অন্য কোন মানুষের বৈশিষ্ট্যের সাথে তুলনা করে যখন তোমার ভালোবাসার মানুষটার প্রতি তোমার এক্সপেকটেশনের উচ্চতাটা বেড়ে যায়, সেই উচ্চতাটা তোমার মানুষটা স্পর্শ করতে পারে না ... ফলাফলঃ সম্পর্কে ভাঙ্গন !!
আমার মা যখন খুব কম বয়সে সংসার শুরু করে, তখন সে ভাত রান্না করতে জানতো না ... তরকারিতে লবণ কম হওয়ার জন্য শ্বাশুড়ির ঝাড়ি শুনে তার দিন কাটতো ... আম্মুর শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিল ... আম্মু অনেক আবেগী ... এই সীমাবদ্ধতাগুলো আমার বাবা কখনো বড় করে দেখে নি ... যদি দেখতো, তাহলে হয়তো এই সুন্দর সংসারটা এতটা সুন্দর হতো না !!
আমার বাবার শিক্ষাগত যোগ্যতা আহামরি না ... এক মুঠ চালভাজা খেয়ে সারা দিন পার করে গ্রামে পড়াশুনা করেছে সে ... আর দশজন ডাক্তার, ম্যাজিস্ট্রেট, ইঞ্জিনিয়ার কিংবা পিএইচডি হোল্ডার মানুষের সাথে তুলনা করে আমার মা কখনো তার সীমাবদ্ধতাটুকু চিন্তায়ও আনে নি !!
আমার বাবার রাগ বেশি, এই রাগটুকু সহ্য করে আমার মা 'কম্প্রোমাইজ' করে গেছে বলেই আজ তারা এখানে ... আমার মা বাস্তবতা চিন্তা করে না - এইটুকু ছাড় দিয়ে বাবা তাকে ভালোবেসে গেছে বলেই আজ তারা ভালো আছে, সুখে আছে !!
বিশ্বাস করো, প্রত্যেকটা মানুষের কোথাও না কোথাও ঘাটতি আছে, দুর্বলতা আছে, অনেক দোষ আছে, অনেক সীমাবদ্ধতা আছে ... তুমি যখনই এই সীমাবদ্ধতাগুলোকে বড় করে দেখবে, তখনই তোমাদের সম্পর্কটা হেরে যাবে !!
তোমাকে ভাবতে হবে, যতটুকু দোষ তুমি খুঁজে পাচ্ছো, ঐটুকু কম্প্রোমাইজ করা যায় কিনা ... তোমাকে হিসেব করতে হবে, মানুষটার কতখানি ভালো আর কতখানি খারাপ ... যদি ভালোর পরিমাণ বেশ হয়, তোমাকে চিন্তা করতে হবে, কিভাবে ঐ সীমাবদ্ধতাগুলোক
ে ঠিক করা যায় !!
আজকে তুমি হয়তো অন্য একটা মানুষের দুটো ভালো গুণের সাথে তোমার মানুষটার তুলনা করে, অন্য মানুষটাকে পারফেক্ট ভাবছো ... তুমি ঐ অন্য মানুষটার সাথে মিশতে থাকো ... গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, একদিন তুমি দেখবে, ঐ অন্য মানুষটার ভেতরেও অনেক সমস্যা আছে, যেগুলো তোমার মানুষটার ভেতর ছিল না !!
একটা মানুষ তোমাকে যেমন আঘাত করতে জানে, তেমনি দিন শেষে তোমাকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরতেও জানে ... ঐ বুকে জড়িয়ে ধরার জন্যই তো বেঁচে থাকা ... এক পশলা ঝুম বৃষ্টি সবটুকু আঘাত ধুয়ে দিবে, এই অপেক্ষায়ই তো আকাশের দিকে ধৈর্য্য নিয়ে চেয়ে থাকা, তাই না ??"
--মুশফিকুর রহমান আশিক
No comments