সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিয়েতে সাত পাকে ঘোরা বা সাত পাকে বাঁধা মানে সাতটি প্রতিশ্রুতি প্রদান
।
## সংকলনে ##
=>=>দ্বীপাল চন্দ্র শীল<=<=
বিয়ে মানে দুটো মনের মিলন, দুটো পরিবারের মিলন। বিয়েতে অনেক নিয়ম কানুন মানা হয়। এক এক ধর্মের এক এক নিয়ম। হিন্দু মতে বিয়ে মানেই শুভদৃষ্টি, মালা বদল, সাত পাকে ঘোরা, খই পোড়ানো, সিঁদুর দান। তবে এই সমস্ত রীতি কিন্তু শুধুই ধর্মীয় কারণে নয়। এর পিছনে আরও অনেক কারণ রয়েছে।
হিন্দু মতে বিয়েতে আমরা দেখতে পাই, আগুনের কুণ্ডলীর চারপাশে বর-কনেকে ঘুরতে। একে সাত পাকে বাঁধা পড়া বলা হয়। বলা হয়, এর মাধ্যমে অগ্নিদেবতাকে বিয়েতে সাক্ষী হিসেবে রাখা হয়। শুধু আগুনের চারপাশে ঘোরাই নয়, এই সময়ে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতিও দিতে হয় একে অপরকে।
প্রথম প্রতিশ্রুতি : প্রথমে স্বামী তাঁর স্ত্রীকে এবং তাঁর ভাবী সন্তানদের যত্ন নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। বিনিময়ে কনেও প্রতিশ্রুতি দেন যে তিনি তাঁর স্বামী এবং তাঁর পরিবারের যত্ন নেবেন।
দ্বিতীয় প্রতিশ্রুতি : এবার স্বামীপ্রতিশ্রু
তি দেন যে, তিনি তাঁর স্ত্রীকে সব রকম পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করবেন। বিনিময়ে স্ত্রীও প্রতিশ্রুতি দেন যে তিনি সব রকম তাঁর পাশে থাকবেন।
তৃতীয় প্রতিশ্রতি : এবার স্বামী প্রতিশ্রুতি দেন যে তিনি তাঁর পরিবারের জন্য রোজগার করবেন এবং তাঁদের দেখভাল করবেন। একই প্রতিশ্রুতি এবার স্ত্রীও করেন।
চতুর্থ প্রতিশ্রুতি : স্ত্রীর কাছে তাঁর পরিবারের সমস্ত দায়িত্ব তুলে দেওয়া এবং একইসঙ্গে স্ত্রীর সমস্ত মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন স্বামী। স্ত্রী তাঁর সমস্ত দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করার প্রতিশ্রুতি দেন।
পঞ্চম প্রতিশ্রুতি : যে কোনও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করার প্রতিশ্রুতি দেন স্বামী। স্বামীকে সমর্থন করার প্রতিশ্রুতি দেন স্ত্রী।
ষষ্ঠ প্রতিশ্রুতি : স্ত্রীর প্রতি সত্য থাকার প্রতিশ্রুতি দেন স্বামী। স্ত্রীও স্বামীর প্রতি সত্য থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।
সপ্তম প্রতিশ্রুতি : শুধু স্বামী হিসেবেই নয়, বন্ধু হিসেবেও সারাজীবন স্ত্রীর সঙ্গে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন স্বামী। বিনিময়ে স্ত্রীও স্বামীর সঙ্গে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।
এই প্রতিশ্রুতিগুলো পরস্পরের প্রতি বহন করতে হয় বলেই হিন্দু বিয়ের শাস্ত্রীয় নাম হলো ‘বিবাহ’, অর্থাৎ ‘বিশেষভাবে বহন করা’। তাই হিন্দু বিয়ে মানেই আজীবনের সুরক্ষা ও অবিচ্ছেদ্য সুখ-শান্তির প্রতিশ্রুতি।
No comments